Shillong Diaries - an unplanned tripling trip
Shillong Diaries- an unplanned tripling trip
“মরিতে চাহিনা আমি এই সুন্দর ভুবনে”- না কথাটা আমার না, কথাটা বলে গিয়েছিলেন
আমাদের রবি ঠাকুর। এতদিন এই কথাটা উপলব্দি করতে না পারলেও এটা শুধু জানতাম যে
ভূবনটা ঠিকই সুন্দর, কিন্তু কতটা সেটা জানতে পারলাম সেদিন, যেদিন পাড়ি দিয়েছিলাম মেঘের
মত সাদা গাড়ি করে বাড়াপানি থেকে ডাউকির উদ্দেশ্যে। হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন, পাহাড়ি
কন্যা শিলং ভ্রমনের কথাই বলছি। বাড়ির অত্যন্ত কাছের জায়গা হওয়া সত্বেও কোনোদিন
সেখানে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি। আসলে সময় সুযোগ ও হয়ে উঠেনি কোনোদিন। তবে আগে যদি তার
এই রূপ অনুধাবন করতে পারতাম, তবে হয়ত অনেক আগেই নিচক কোনো বাহানা বানিয়ে চলে
যেতাম। যাই হোক সৌভাগ্যটা শেষমেশ এবার হল, আর সেটা করে দিল আইসিএআর নেট। আগে থেকেই
জানা ছিল যে পরিক্ষার স্থান শিলং পড়বে, তাই পরিক্ষার প্রস্তুতির চেয়ে গুরার
প্রস্তুতিটাই বেশি হচ্ছিল। তবে জামেলাটা বাঁধল যাওয়ার ধারগোড়ায় এসে, যখন জানতে
পারলাম যে আমাদের পরিক্ষার স্থান শিলং নয়, গুহাটি। সব আশা ভরসায় পানি পড়েগেল।
অগত্যা মনে একরাশ দুঃখের মধ্যে পাথড় চাপা দিয়ে তাড়াহুড়ো করে গুহাটি যাওয়ার
প্রস্তুতি নিতে হল। আমাদের এই ভ্রমনের শুরু থেকে শেষের সঙ্গী ছিল শিউলিদি ও সমঋতাদি।
একেবারে ট্রিপ্লিং ট্রিপ যাকে বলে। হাম কিসিসে কাম নেহি। একটা রাস্তা বন্দ হলে
আমরা আরও দুটো রাস্তা খোলার জন্য সদা প্রস্তুত।
৮ এপ্রিল আমরা ট্রেনে চেপে রওনা হলাম গুহাটি এর উদ্দ্যেশে পরীক্ষা দিতে। তবে
পুরো রাস্তায় আমাদের কথোপকথন এর মূল বিষয় বস্তু ছিল শিলং ভ্রমন সাকসেসফুল করার
পরিকল্পনা। এতে বিস্মিত হবার বিন্দু মাত্র কোনো কারন নেই যে পরেরদিন পরিক্ষা
থাকলেও সেটা নিয়ে টেনশন কিনবা মাথাব্যাতা কারোও ছিলনা। কেন ছিলনা সেটা কেবল মাত্র একজন
ভ্রমণ পিপাসু ব্যাক্তি-ই বুঝতে পারবেন, বাকিদের বোজানোর সাধ্য আমার নেই। এদিকে
রাতে গুহাটি পৌঁচে থাকার ব্যবস্থা করতে হবে; এ আর কি বড় কথা, ফোনের কন্টাক্ট
লিস্টে গোটা কয়েক হোটেলের নাম্বার ছিল, কোনোনা কোনোটায় রুম ত পেয়েই যাবো। কিন্তু
সেই যে বলেছিলাম, শুরু থেকেই একটা পিছুটান আমাদের পিছু নিয়েছে যে কোনো কাজ-ই
আমাদের সহসায় হতে দেবেনা। প্রত্যেকটা নাম্বার এ কল করার পর অপর প্রান্ত থেকে একটাই
উত্তর, “সরি আজ আমাদের হোটেলে কোনো রুম খালি নেই”। গুগল দাদুর কাছ থেকে আরো কিছু
হোটেলের নাম্বার জোগাড় করা হল, কিন্ত এতেও কোনো কাজ হয়নি। শেষমেশ ওয়ো হোটেল বুকিং
কাজে এল। ভালো রুমই পেয়েগেলাম গুয়াহাটির প্রাণকেন্দ্র পল্টন বাজারেই। তবে ঘটনা
এখানেই শেষ হলোনা। সারাদিনের জার্নির পর হোটেলে পৌঁছে ফ্রেশ হতে গিয়ে বাথরুম এ লক
হয়ে গেল শিউলিদি। পরে হোটেল কতৃপক্ষের তৎপরতায় দরজার লক খুলে দিদি কে বের করা হল। তার
পর ডিনার সেরে সবাই ঘুম। প্রথম দিনের ইতি ঘটল এভাবেই।
রাত তখন প্রায় ৮টা। একটা অন্ধকার বাইপাস ব্রিজের নিচে গাড়ি থামল। এটাই নাকি
আমাদের গন্তব্য। জায়গাটা কোনো হিন্দি সিনেমার ক্রাইম সিনে দেখানো জায়গার চেয়ে কিছু
অংশে কম মনে হয়নি তখন। চারিপাশ অন্ধকার, দুটো গাড়ি রাখা, গাড়ির ভেতর মিট মিট লাল
আলো জ্বলছে। এক ড্রাইবার এসে ত পারলে জোর করে গাড়িতে বসিয়ে আমাদের গন্তব্যে পৌঁছে
দেবে এমন ভাব দেখাচ্ছিল। কিন্তু বিপদ তো আমাদের পিছু ছাড়বেনা, ফোন করতে যাব তো
কারো ফোনেই নেটয়ার্ক নেই। এই ঘুটঘুটে অন্ধকারে অচেনা জায়গায় এত রাত্রে কোন ভরসায়
দাঁড়ানো যায়। অগত্যা কোনো রাস্তা না পেয়ে অন্তত একটা সুরক্ষিত জায়গা বলতে আইসার
ক্যাম্পাসের কথাই মাথায় এলো। তাই দেরি না করে রাস্তায় পরিচয় হওয়া ছেলেটার সাহায্য
নিয়ে ট্যাক্সি করে আমরা পৌছাই সেন্ট্রাল এগ্রিকালচার ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে।
ততক্ষনে আমাদের ফোনের নেটয়ার্কও এসে পড়ে আর সৌরজ্যোতি দাদার সাথেও কথা হয়ে যায়। ও
ডিউটিতে বেরিয়ে ছিল, আধ ঘন্টার মধ্যে ফিরে আসবে। এতক্ষণ এই টেনশনে শিলং পৌছার
অনুভূতি সাড়া জাগাতে না পারলেও গাড়ি থেকে নামার পর থেকেই তার শীতল স্পর্শের আলত
ছোঁয়া আমাদের দোলা দিয়েই যাচ্ছিল। সব চিন্তা ভাবনার যখন অবসান ঘটল তখন আমাদের টনক
নড়ল। অনুভূত হলো, চৈত্রের শেষে বৈশাখের প্রারম্বের দাবদাহের জায়গায়, কে যেনো শীতল
চাঁদর জড়িয়ে দিয়েছে আমাদের গায়। পুষ্পবৃষ্টির ন্যায় আমাদের উপর পরতে লাগলো অতি
সুক্ষ কণাময় জলবিন্দু, যেন মাঘের রাতের মায়াবি কুয়াশা।
পরদিন ঘুম ভাঙ্গল সকাল ৭টায়। বিশ্বজিতের হোস্টেলের জানলা দিয়ে দূরের পাহাড় যেন
হাতছানি দিয়ে ডাকছে কাছে যেতে। স্নান সেরে নিয়ে রেডি হয়ে গেলাম। শিউলিদি ফোন করল
“বেরিয়ে পর, আমরা গাড়ি নিয়ে আসছি”। বন্ধু বিশ্বজিত ও তার কলেজমেট দের বিদায় বলার
পালা। গত রাতের এতকিছুর পর ওরা অনেকটা কাছের হয়ে গিয়েছিল। এক রাতেই যেন অনেক পরিচিত
হয়ে গেল সবাই, আপন করে নিয়েছিল আমাদের। মনেই হয়নি যে গত রাতেই ওদের সাথে প্রথম দেখা। মনে
হচ্ছিল কত দিনের যেন পরিচিত ওরা। বিশ্বজিত গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিল। গাড়ি হাজির, যেতে মন খারাপ হচ্ছিল, তবে
আমাদের যাত্রা এখানে শেষ নয়, কেবল শুরুর অপেক্ষায়। তাই মন খারাপ না করে আমরা তিনজন
ট্রিপ্লিং টৌরের জন্য বেরিয়ে পরলাম।
২০-২৫ মিনিটের মধ্যেই আমরা
শিলং শহরে পৌছে গেলাম। পুরো জার্নির মূল কেন্দ্রবিন্দু শিলং শহরে তখন আমরা
দাঁড়িয়ে। যেন ব্যতিক্রমী একটা জায়গা। বৈদেশিক আড়ম্বরে সবকিছু যেন সুসয্যিত। একবারের
জন্যেও মনে হচ্ছিল না যে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কোনো রাজ্যে দাঁড়িয়ে আছি। কিছুটা মনে
হচ্ছিল যেন স্বপ্নপূরি দার্জিলিং এর প্রতিচ্ছবি, শুধু টয় ট্রেনের খামতি ছিল। আমাদের যাত্রা চলছে,
গন্তব্য এখনও ৮০-৯০ কিমি। সকাল তখন প্রায় ৯.১৫-৯.৩০। তখনও ব্রেকফাস্ট হয়নি আমাদের।
ওহ, একটা কথা বলা হয়নি, আমাদের পুরো জার্নিতে, আমাদের সঙ্গে প্রয়োজনীয় কিছু থাকুক
বা না থাকুক গোটা ৫-৬ প্যাকেট চিপস, পাফকর্ন দিদিদের ব্যাগে জায়গা অবশ্যই দখল করে
রাখত। তাই, পুরো রাস্তা আমাদের মুখের জন্য খুব চাপের ছিল। হয়ত কথা বলছি, নয়ত
খাচ্ছি, বিরাম পাবার য নেই। রাস্তা এগোচ্ছে, সরি, ভুল বল্লাম, গাড়ি এগোচ্ছে
গন্তব্য কাছে আসছে। ধীরে ধীরে উচ্ছতা বাড়ছে জানান দিল কান। টন টন শুরু হয়ে গেল, আস্তে
আস্তে কথার আওয়াজও ক্ষীণ হতে লাগল।
তারপর আরো অনেকটা পথ চলা। মাউলিনং, যে জায়গাটা
পুরো এশিয়া মহাদেশের মধ্যে স্বচ্ছতম গ্রামের শিরোপা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই একদিনের
মধ্যে প্রকৃতির কত রুপের সাক্ষী হয়ে থাকব আমরা বলতে পারবোনা। গ্রামের বিবরণ দেওয়ার
মত কিছু নেই আমার কাছে। শুধু একটিবার নীরবে দাঁড়িয়ে লম্বা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আসলে
বোধয় আমাদের আয়ু অনেক বছর বেড়ে যাবে। গ্রামটা পুরো ঘুরে দেখার সময় হয়নি, কেনা কাটা
করতে করতে-ই পুরো সময়টা চলে গেছে। কেনা কাটার পর গাড়ির পেছনের থ্রি সিটারে দুই
দিদির সঙ্গে মস্ত একটা বড় বাক্স তৃতীয় ব্যাক্তির অভাব ভুলিয়ে দিয়েছিল।
রাস্তা থেকে ডাউকির জল দেখা
যাচ্ছিল। সবুজ। অনেক গুলো নৌকা নিয়ে মানুষ গুরছে। আমরাও একটা নৌকা ভাড়া করে নিলাম।
হ্রদটার একপাশে বাংলাদেশের আইল্যান্ড আর অন্য পাশে ভারতের। প্রথমে ভারতের আইল্যান্ডের
দিকে নৌকা নিয়ে যাচ্ছিল অতি অল্প বসয়ের একটা ছেলে। হ্রদের জল আয়নার মত স্বচ্ছ, যা
বিশ্বাসের অতীত। জলের মাছের চলাফেরা এমনকি হ্রদের নীচের পাথরগুলোকেও স্পষ্ট দেখা
যাচ্ছিল। চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলামনা যে কোনো হ্রদের জলও এমন পরিস্কার
এবার এল ফেরার পালা। বীপরিত
অভিমুখে ছুটতে হবে আবার প্রায় ৯০ কিমি। সন্ধ্যাও প্রায় হয়ে আসছিল। গাড়ি ছুটছে, আর
আমরা পুরোদিনের মুহুর্তগুলোকে স্মৃতিচারন করতে করতে এগিয়ে এলাম অনেকটা পথ। হঠাৎ
সামনে এসে পড়ল সেই মেঘের চাঁদর। যে মেঘের চাঁদর দেখে সকালে আমরা খুশীতে আত্মহারা
হয়ে গিয়েছিলাম, সেই মেঘই এখন ভয়ের কারন হয়ে দাঁড়াল। গাড়ির হেডলাইটের আলোয় রাস্তা
কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। একদিকে পাহাড় ত একদিকে খাই। সামনে বড়জোর ৪-৫ হাতের মত
জায়গা কোনোরকম দেখা যাচ্ছিল, বাকি জায়গা পুরো ঘন ধোঁয়ার মত মেঘে আচ্ছন্ন। অনেক
কস্টে গাড়ি চালাচ্ছিল আমাদের ড্রাইবার। আমরা বসে বসে ভাবছিলাম কি করা যায়। যদিও
করার কিছু ছিলনা শুধুমাত্র টেনশন ছাড়া। কিছু রাস্তা যাওয়ার পর কোথা থেকে জানিনা
একটি কালো গাড়ি সিগন্যাল ইন্ডিক্যাটর জ্বালিয়ে আমাদের ওভারটেক করল, আর এত স্পিডে
গাড়ি চালাতে লাগলো যে আমাদের গাড়ির ড্রাইভার পর্যন্ত অবাক হয়ে গেল এই রাস্তায়
কিভাবে ও এত স্পিডে গাড়ি চালাতে সক্ষম হচ্ছে। জানিনা গাড়িতে কে, কোথা থেকে এসেছিল,
তবে গাড়িটা আমাদের কাছে সেই মুহুর্তের জন্য ভগবান সমতুল্য হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। ঐ
গাড়িকে ফলও করেই আমাদের গাড়ি এই ভয়াবহ মেঘের চাদরে ডাকা রাস্তা পেরিয়ে আসতে সক্ষম
হলো। মেঘের জায়গা পেরিয়ে আসতেই গাড়িটাও জানিনা আবার কোথায় হাওয়া হয়ে গেল।
যাইহোক, ভালোয় ভালোয় আমরা তখন
শিলং শহরে। যেতে হবে অরবিন্দ আশ্রমে। ফোন করে আমরা আগেই আমাদের জন্য ডরমেন্টরি বুক
করে রাখা হয়েগিয়েছিল। কিন্তু এখানে পৌছার আগেই আবার বিপত্তি। জায়গাটা ড্রাইভারের
চেনা ছিলনা। অগত্যা আমরা সাহায্য নিলাম গুগল ম্যাপ এপ্সের। বিজ্ঞানের ক্ষমতায় আর
ইন্টারনেটের দৌরাত্বে দুনিয়া এখন আমাদের হাতের মুঠোয়। আর্টিফিসিয়াল
ইন্টালেজেন্সিয়ের দৌলতে দুনিয়া এখন অনেক সহজ। অরবিন্দ আশ্রমের নেভিগেসান আমাদের
হাতের কাছে। কিন্তু, বিজ্ঞানের এই আর্টিফিসিয়াল ইন্টালেজেন্সি যে মাঝে মধ্যে
সত্যিকারের আর্টিফিসিয়াল হতে পারে তার জ্বলন্ত উদাহরন দিল আমাদের। গুগল ম্যাপের নেভিগেসনে তিনবার সেইম জায়গায়
গুরতে গুরতে আমাদের আসল জায়গাটা আর খুজে পেলাম না। শেষ পর্যন্ত রাস্তার মানুষদের
জিজ্ঞেস করে গিয়ে পৌচালাম অরবিন্দ আশ্রমে।
আশ্রমের লেডিস ডর্মেন্টরি পুরো
খালি-ই ছিল। তাই শিউলিদি আর সমঋতাদি ওরা দুজনই ছিল ঐ রোমে। তবে জেন্টস
ডর্মেণ্টরিতে সৌভাগ্য কিংবা দূর্ভাগ্য বসত জানিনা ঐ রোমে একজন মানুষ ছিল আগে
থেকেই। রোমে ডোকার পর পরিচয় হয় মানুষটার সাথে। ভীষনভাবে আজব দেখতে, ভীষন অন্যরকম
ছিল মানুষটা। কিছুটা পাগল বলা যেতে পারে, আবার নাও। এক কথায় খুব সন্দেহবাজন বলা
চলে। কথা বার্তা ফ্লুয়েন্ট ইংরাজিতেই বলছিল। জানাল যে ও মাইসোর থেকে এসেছে শিলং
ট্রিপে। আমাদের পেয়ে এখন ও আমাদের পরেরদিনের ট্রিপের সঙ্গী হতে চায়। হ্যাঁ বলা হবে
কি না সাতপাঁচ ভেবে শেষ পর্যন্ত যা হবে দেখা যাবে ভেবে হ্যাঁ করে দেই আমরা। রাতটা
একটু ভয়ে ভয়ে-ই কাটে আমার। একা এক রোমে ঐ আজব লোকের সাথে থাকাটা একটু রিস্কি। রাতে
দিদিরা ফোন করে খবর নেয় যে সব কিছু ঠিক আছে কিনা। আমিও যতটুক সতর্কতা নেওয়া যায়
নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।
১১ এপ্রিল। সকালে ঘুম ভাঙ্গে
মিস্টার বেনের ডাকে। বেন সেই গতরাতের আজব লোকটির নাম। ও আরও বলেছিল যে মাইসোরে ওর
একটা ভার্টিক্যাল গার্ডেন হাউস আছে, ঐটা নাকি ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের জন্যেও নমিনিত
হয়েছিল। পরে অবশ্য ইন্টারনেটে এর সত্যতা যাচাই করে তার কথার মিল পাওয়া গিয়েছিল। তো
যা বলছিলাম, সকালে ঘুম ভাঙ্গল বেনের ডাকে। কথা ছিল সকালে উঠে আমরা ৭টার দিকে চলে
যাব মেঘালয়া ট্যুরিজম সার্ভিস কাউন্টারে। সেখান থেকে ট্যুরিজম বাসে করে আজকের
ট্রিপ হবে চেরাপুঞ্জির উদ্দেশ্যে। অত্যুৎসাহি বেন সকাল সকাল উঠে রেডি হয়ে আমাকে
ডাকল দেরি হয়ে যাবে এই ভেবে। রেডি হয়ে আমরা গেলাম এমটিএস কাউন্টারে। ভাগ্য ভালো
ছিল শেষ ৪টা টিকেট পেয়েগেলাম আমরা। সকালের ব্রেকফাস্ট করে উঠে পরলাম বাসে। তখনও
মিস্টার বেনের প্রতি সন্দেহটা আমাদের পুরোপুরি কেটে উঠেনি, যেন ও আরো রহস্যাবৃত
ঠেকছিল আমাদের কাছে।
মাওজিম্বুইন কেইভ। বাইরে খুব
বৃষ্টি। চেরাপুঞ্জির ব্যাপারে যা শুনেছিলাম, তা সচক্ষে দেখলাম। সুন্দর রোদছিল
আকাশে। হঠাৎ কোথা থেকে এত বৃষ্টি চলে এল। আবার কিছুক্ষন পর রোদ, ভাবাই যাবেনা যে
কিচুক্ষন আগে এখানে এত বৃষ্টি হয়ে গেছে। সবাই টিকেট করে কেইভে যাচ্ছে। হটাৎ করে
বেন কোথা থেকে একটা ছাতা নিয়ে হাটু অব্দি প্যান্ট ভাঁজ করে টিকিট না করেই দৌড়ে
ডুকে গেলো কেইভে। আমরা ওর কান্ড দেখে হা...। এত সময়ের মধ্যে ও বাসের অনেক
অল্পবয়সীদের সাথে বন্ধুত্বও পাতিয়ে নিয়েছিল।
কিছুক্ষন পরে ও ফিরে এল, ও এই
বয়সে সিড়ি বেয়ে চল গেছিল অনেকটা নীচে। সঙ্গী করেছিল কলকাতার এক ছেলেকে। যখন ও বাসে
এসে উঠল, কেউ একজন জিজ্ঞেস করেছিল যে লাঞ্চ করেছে কিনা। ও বলল “দেয়ার ইজ নো টাইম
ফর লাঞ্চ”। শেষমেষ একজন লোক বলেই ফেললো, “স্যার আই ওয়ান্ট টু স্যায় ইউ সামথিং, ইউ
আর ফুল অফ ইন্সিরেশন, ইউ আর আইডল ফর হ্যাপিনেস”। জবাবে বেন বলেছিল “ন মেটার হোয়াট
ইজ হেপেনিং, ইউ সুড বি হেপি অলওয়েজ, এন্ড ইটস ফ্রি টু বি হেপি”। তার এই কথা গুলো
সারাজীবন মনে গাথা হয়ে থাকবে। যদি কিছুটাও তার থেকে শিখতে পারি, তাও নিজেকে ধন্য মনে
হবে।
বাস চলে এসেছে, জিনিশ পত্র
নিয়ে উঠে পরলাম আমরা। বিকেলে পৌচালাম শিলচর আইএসবিটিতে। তারপর অটো করে কেপিট্যাল
পয়েন্ট। সমঋতাদি কে বাই জানিয়ে শিউলিদি আমি অটো করলাম আবার। শেষমেশ অম্বিকাপট্টিতে
এসে শিউলিদিকেও বাই জানিয়ে একা আমি চললাম ঘরে। মনটা খুব খারাপ লাগছিল। দুদিনের
এতটা আনন্দের পর যেন দশমীর বিষাদ ভরা অনুভূতি। তবে পুরো ট্রিপে আমরা এত প্রতিকুলতা
পেরিয়েও যা পেয়েছি, তা চিন্তার অতীত। এই ট্রিপ জীবনে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। মনের
এক কোনে জায়গা করে থাকবে, মিস্টার বেন, ঈষা গুপ্তা এমনকি আমাদের প্রথম দিনের
ড্রাইভার মিঠুনও। এই ট্রিপ হয়ত, না হয়ত বললে ভুল হবে, নিশ্চিত সমঋতাদি, শিউলিদি না
থাকলে এতটা জীবন্ত হয়ে উঠতনা, কারন দিদিদের মধ্যে ছিল অসীম ভ্রমন পিপাসা, অভিজ্ঞতা,
যেকোনো প্রতিকুলতার মধ্যেও ভয় না পেয়ে ধীরে সুস্তে সঠিক ডিসিশন নেওয়ার প্রতিভা, যা
আমাদের এই ট্রিপের জন্য অত্যন্ত জরুরি ছিল। যাই হোক, হাসি-আনন্দ-চিন্তার মধ্য দিয়ে
আমাদের এই ট্রিপ্লিং আনপ্ল্যান্ড শিলং ট্রিপ ছিল গ্রেন্ড সাকসেস। আবার কোনোদিন সময়
সুযোগ হলে, ব্যাকপ্যাক গুছিয়ে বেরিয়ে পড়ব অন্য কোনো অজানাকে জানতে। তখন নাহয় অন্য
কোনো আরেক আনপ্ল্যান্ড কিংবা প্ল্যান্ড ট্রিপের অভিজ্ঞতা নিয়ে আবার কলম ধরব।
* * * * * * *
By Rajat Nath
No comments